ঢাকা ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাল গোলাপের রাজ্য বিরুলিয়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৩৫:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • ৪৯৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পুষ্প্রপ্রেমীদের সবচেয়ে প্রিয় ফুল গোলাপ। সৌন্দর্যের প্রতীক এ গোলাপকে ফুলের রানী বলা হয়। আর সেই লাল টকটকে গোলাপ চাষ করছেন তুরাগ নদের কোলে সাভারের বিরুলিয়া গ্রামের কৃষকরা। দেখে মনে হবে যেন এক লাল গোলাপের রাজ্য। গোলাপ চাষের কারণে গ্রামগুলো ‘গোলাপ গ্রাম’ নামে পরিচিত। কৃষি কাজের বদলে এ ফুল চাষকে পেশা হিসেবে নিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন সাভারের অনেক কৃষক। প্রায় দুই শতাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে এ ফুলের চাষ করে আসছেন।

বিরুলিয়া ইউনিয়নের গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯০ সালে ঢাকার কয়েকজন যুবক অন্যের জমি লিজ নিয়ে এখানে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো আর ওই যুবকদের সফলতা দেখে স্থানীয়রাও ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ শুরু করেন। খুব কম সময়ের মধ্যে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গ্রামটিতে।

কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে  গোলপের চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বিরুলিয়ার মোস্তাপাড়া, সামাইর ও শ্যামপুর এলাকায়। প্রায় দুই শতাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে এ ফুলের চাষ করে আসছে। ফলন আর চাহিদা ভালো হওয়ায় দিনে দিনে বাড়ছে চাষির সংখ্যা।

এলাকার কয়েকজন চাষি জানান, প্রতিদিন বিকালে গোলাপ সংগ্রহ করেন তারা। এরপর সন্ধ্যায় স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রির উদ্দেশ্যে গোলাপ নিয়ে যান তারা। সেখানে স্থানীয় ও ঢাকা থেকে আসা ক্রেতারা গোলাপ কিনে নেন। রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। তারপর এখানকার উৎপাদিত গোলাপ ছড়িয়ে পড়ে ঢাকার বিভিন্ন জনপ্রিয় ফুলের দোকানে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ চাষ করে থাকেন চাষিরা। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতটি হলো টকটকে লাল মিরান্ডা। তবে অন্যান্য জাতের গোলাপও রয়েছে। গ্রামগুলোর চাষিদের আয়ের উৎস এই গোলাপ। গোলাপ ছাড়াও গ্রামগুলোতে অন্যান্য ফুলের চাষ হয়ে থাকে। তবে সেটা তুলনায় সামান্যই। এক থেকে দেড় মাস ব্যতীত প্রায় সারা বছরই ফুল তোলা যায়। বাকি সময়ে গাছের আগা ছেঁটে দেন তারা। ফলে নতুন সাজে গাছ বেড়ে উঠে ফুল ধরতে এক থেকে দেড় মাস সময় নেয়। তবে গোলাপ চাষে তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না তাদের।

গোলাপ চাষি মনির হোসেন জানান, গোলাপ চাষ একটি নিশ্চিত লাভের ব্যবসা। এতে খুব কম ঝুঁকি থাকে কারণ একবার চারা রোপণ করলে ২৫ বছর নিশ্চিন্তে ফলন পাওয়া যায়। একদিন বাজারে গোলাপের দাম কম পেলেও পরে তা পুষিয়ে নেয়া যায়, যা অন্য কোনো সবজি চাষে এমন সুবিধা পায় না কৃষকরা। এছাড়াও বিক্রিরও কোনো ঝামেলা নেই। বাড়ির কাছে সৃষ্ট ফুলের বাজারগুলোতে পাইকাররা এসে ফুল কিনে নিয়ে যায়। মোঃ আবুল হোসেন নামের এক চাষি বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর ধরে গোলাপ চাষ করছি। লাভজনক হওয়ায় এ পেশায় এসেছি। প্রতিদিন বিরুলিয়ার বাজারগুলোতে প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়। যদি সরকার ফুল রফতানিতে আরও ভূমিকা রাখত তবে এর চেয়ে বেশি গোলাপ বিক্রি হতো বাজারগুলোতে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

লাল গোলাপের রাজ্য বিরুলিয়া

আপডেট টাইম : ০৩:৩৫:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পুষ্প্রপ্রেমীদের সবচেয়ে প্রিয় ফুল গোলাপ। সৌন্দর্যের প্রতীক এ গোলাপকে ফুলের রানী বলা হয়। আর সেই লাল টকটকে গোলাপ চাষ করছেন তুরাগ নদের কোলে সাভারের বিরুলিয়া গ্রামের কৃষকরা। দেখে মনে হবে যেন এক লাল গোলাপের রাজ্য। গোলাপ চাষের কারণে গ্রামগুলো ‘গোলাপ গ্রাম’ নামে পরিচিত। কৃষি কাজের বদলে এ ফুল চাষকে পেশা হিসেবে নিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন সাভারের অনেক কৃষক। প্রায় দুই শতাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে এ ফুলের চাষ করে আসছেন।

বিরুলিয়া ইউনিয়নের গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯০ সালে ঢাকার কয়েকজন যুবক অন্যের জমি লিজ নিয়ে এখানে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো আর ওই যুবকদের সফলতা দেখে স্থানীয়রাও ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ শুরু করেন। খুব কম সময়ের মধ্যে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গ্রামটিতে।

কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে  গোলপের চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বিরুলিয়ার মোস্তাপাড়া, সামাইর ও শ্যামপুর এলাকায়। প্রায় দুই শতাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে এ ফুলের চাষ করে আসছে। ফলন আর চাহিদা ভালো হওয়ায় দিনে দিনে বাড়ছে চাষির সংখ্যা।

এলাকার কয়েকজন চাষি জানান, প্রতিদিন বিকালে গোলাপ সংগ্রহ করেন তারা। এরপর সন্ধ্যায় স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রির উদ্দেশ্যে গোলাপ নিয়ে যান তারা। সেখানে স্থানীয় ও ঢাকা থেকে আসা ক্রেতারা গোলাপ কিনে নেন। রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। তারপর এখানকার উৎপাদিত গোলাপ ছড়িয়ে পড়ে ঢাকার বিভিন্ন জনপ্রিয় ফুলের দোকানে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ চাষ করে থাকেন চাষিরা। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতটি হলো টকটকে লাল মিরান্ডা। তবে অন্যান্য জাতের গোলাপও রয়েছে। গ্রামগুলোর চাষিদের আয়ের উৎস এই গোলাপ। গোলাপ ছাড়াও গ্রামগুলোতে অন্যান্য ফুলের চাষ হয়ে থাকে। তবে সেটা তুলনায় সামান্যই। এক থেকে দেড় মাস ব্যতীত প্রায় সারা বছরই ফুল তোলা যায়। বাকি সময়ে গাছের আগা ছেঁটে দেন তারা। ফলে নতুন সাজে গাছ বেড়ে উঠে ফুল ধরতে এক থেকে দেড় মাস সময় নেয়। তবে গোলাপ চাষে তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না তাদের।

গোলাপ চাষি মনির হোসেন জানান, গোলাপ চাষ একটি নিশ্চিত লাভের ব্যবসা। এতে খুব কম ঝুঁকি থাকে কারণ একবার চারা রোপণ করলে ২৫ বছর নিশ্চিন্তে ফলন পাওয়া যায়। একদিন বাজারে গোলাপের দাম কম পেলেও পরে তা পুষিয়ে নেয়া যায়, যা অন্য কোনো সবজি চাষে এমন সুবিধা পায় না কৃষকরা। এছাড়াও বিক্রিরও কোনো ঝামেলা নেই। বাড়ির কাছে সৃষ্ট ফুলের বাজারগুলোতে পাইকাররা এসে ফুল কিনে নিয়ে যায়। মোঃ আবুল হোসেন নামের এক চাষি বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর ধরে গোলাপ চাষ করছি। লাভজনক হওয়ায় এ পেশায় এসেছি। প্রতিদিন বিরুলিয়ার বাজারগুলোতে প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়। যদি সরকার ফুল রফতানিতে আরও ভূমিকা রাখত তবে এর চেয়ে বেশি গোলাপ বিক্রি হতো বাজারগুলোতে।